Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৯ জুলাই ২০২৪

প্রধান নির্বাহীর বার্তা

ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেড (ইআরএল) দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল শোধনাগার। প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এর আওতাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এর অন্যতম অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী উত্তর পতেঙ্গায় ২০২ একর জমির উপর বিস্তৃত।  
 
ইআরএল’র বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে আমাদের দেশ ছিল সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। ১৯৬০ এর দশকের শেষ দিকে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের রিফাইনারীগুলো থেকে পরিশোধিত জ্বালানি তেল এনে এদেশের জ্বালানি চাহিদার আংশিক মেটানো শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে কতিপয় শিল্প উদ্যোক্তা, তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান শিল্পোন্নয়ন কর্পোরেশন (EPIDC) ও যুক্তরাজ্যের বার্মা অয়েল কোম্পানি (BOC) এর যৌথ অংশীদারিত্বে বার্ষিক ১৫ লক্ষ মে. টন পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি রিফাইনারী স্থাপনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায়, রিফাইনারীর সংস্থাপন কাজ সম্পন্ন করার নিমিত্ত ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬ তারিখ ফ্রান্স ভিত্তিক TECHNIP, ENSA এবং COFRI নামক তিনটি প্রতিষ্ঠানের কনসোর্টিয়ামের সাথে টার্ন-কী চুক্তি সম্পাদিত হয়। ২৮ ডিসেম্বর ১৯৬৭ রিফাইনারীর সংস্থাপন কাজ সম্পন্ন হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা Mr. Charles Mc. Farlane-কে কোম্পানির প্রথম জেনারেল ম্যানেজার (প্রধান নির্বাহী) হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। মহান স্বাধীনতার ঊষালগ্নে ০৭ মে ১৯৬৮ রিফাইনারী প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই ১৭ মে ১৯৭২ দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেড-কে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা প্রদানপূর্বক বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশন এর অধীনে ন্যস্ত করেন। পরবর্তীতে, ০১ জানুয়ারি ১৯৭৭ ইআরএল’কে নবগঠিত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর অধীনে ন্যস্ত করা হয়। 

রিফাইনারীর প্রধান কাঁচামাল আমদানিকৃত ‘ক্রুড অয়েল’ বা অপরিশোধিত তেল। বড় অয়েল ট্যাংকার (১,০০,০০০ মে. টন ধারণক্ষমতার) এর মাধ্যমে আমদানিকৃত ‘ক্রুড অয়েল’ বঙ্গোপসাগর এর কুতুবদিয়া পয়েন্ট এ আসে। তারপর ছোট লাইটারেজ ট্যাংকার (১২,০০০ মে. টন ধারণক্ষমতার) এর মাধ্যমে পরিবহন করে আরএম-৭ ডলফিন জেটিতে এনে সেখান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ইআরএল’র ক্রুড ট্যাংকে মজুদ করা হয়। মজুদকৃত ‘ক্রুড অয়েল’ পাতন প্রক্রিয়ায় পরিশোধনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যসমূহ যেমন: (১) এলপিজি [লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস] (২) এসবিপিএস [স্পেশাল বয়েলিং পয়েন্ট সলভেন্ট] (৩) মোটর গ্যাসোলিন রেগুলার [পেট্রোল] (৪) মোটর গ্যাসোলিন প্রিমিয়াম [অকটেন] (৫) ন্যাফথা [গ্যাসোলিন] (৬) এমটিটি [মিনারেল টার্পেনটাইন] (৭) এসকেও [সুপিরিয়র কেরোসিন অয়েল] (৮) জেট এ-১ [এভিয়েশন টারবাইন ফুয়েল] (৯) এইচএসডি [হাই স্পীড ডিজেল] (১০) জেবিও [জুট ব্যাচিং অয়েল] (১১) এলডিও [লাইট ডিজেল অয়েল] (১২) এফও [ফার্নেস অয়েল] (১৩) বিটুমিন ইত্যাদি উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত পণ্যসমূহ বিপিসি’র অধীনস্থ মার্কেটিং কোম্পানিসমূহে সরবরাহ করা হয়। বিপিসি’র সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্ত ‘পরিশোধন ফি’ রিফাইনারীর আয়ের মূল উৎস। ইআরএল’র অপারেশনাল কার্যক্রম দিন-রাত ২৪ ঘন্টা শিফ্ট ভিত্তিক পরিচালিত হয়।

আপৎকালীন জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় ইআরএল এর রয়েছে স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস। দেশের ইতিহাসে ডিজেল ও জেট এ-১ এর ভয়াবহ সংকট ইআরএল অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবেলা করেছে। তাছাড়া, ১৯৯১ সালের এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে সমগ্র দেশ যখন চরম জ্বালানি তেল সংকটে নিপতিত তখন মাত্র ১২ দিনের মধ্যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ইআরএল কোন বিদেশী বিশেষজ্ঞ ছাড়াই অপারেশনাল কার্যক্রমে ফিরে আসে এবং দেশের উদ্ভূত জ্বালানি সংকট নিরসন করার মাধ্যমে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।        

ইআরএল লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অদ্যাবধি সুপ্রতিষ্ঠিত। প্রতি বছর সরকারি কোষাগারে বিপুল পরিমাণ অর্র্থ পরিশোধের মাধ্যমে ইআরএল দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে একটি অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইআরএল’র অব্যাহত সাফল্যের নেপথ্য শক্তি এর অদম্য জনসম্পদ, ক্রমাগত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ব্রত নিয়ে যারা সতত রয়েছেন উদ্যমী ও কর্মশীল। রিফাইনারীর সুস্থ শিল্প সম্পর্ক, উপযুক্ত ও মনোরম কর্মপরিবেশ বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক পরিচালনার ফলে অর্ধশতাব্দীরও অধিক পুরাতন রিফাইনারী আজও শতভাগ উৎপাদনক্ষম রয়েছে। 

বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী ইআরএল ২২৩ জন কর্মকর্তা এবং ৬৫২ জন শ্রমিক-কর্মচারী সমন্বয়ে ৮৭৫ জনের এক বিশাল পরিবার। ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী।   

ঐতিহ্য, গৌরব ও সাফল্যের সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে ইআরএল অনেকগুলো ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করেছে, যথা- বার্ষিক পরিশোধন সক্ষমতার শতভাগের অধিক (১০১.০১%) অর্জন, এলপজি উৎপাদন সক্ষমতা পূর্বের তুলনায় ৪০% বৃদ্ধি, প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (APA) সর্বোচ্চ দক্ষতার সাথে বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রথম স্থান অধিকার এবং ৫২তম জাতীয় সমবায় দিবসে রাষ্ট্রীয় স্বর্ণপদক অর্জন। স্বল্পতম সময়ে এতগুলো ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করা প্রতিষ্ঠানের জন্য পরম আনন্দ, গর্ব ও অহংকারের বিষয় যা ইঞ্জিনিয়ারিং শ্রেষ্ঠত্ব, ইন্ডাস্ট্রিয়াল লংজিভিটি, ক্যাপাসিটি ইউটিলাইজেশন এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার এক বিরল ও অনন্য দৃষ্টান্ত হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে।       

জ্বালানি তেলের পরিশোধন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সহজ ও নিরাপদ পরিবহন সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং সঠিক ও নির্ভুল পরিমাপের লক্ষ্যে ইআরএল কর্তৃক যথাক্রমে ‘ইন্সটলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’; ‘ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ এবং ‘ডিজাইন, সাপ্লাাই, ইন্সটলেশন, টেস্টিং এন্ড কমিশনিং অফ কাস্টডি ট্রান্সফার ফ্লো মিটার উইথ সুপারভিজরি কন্ট্রোল এট ইআরএল ট্যাংক ফার্ম’ শীর্ষক সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় সহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকবলের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই সাথে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ভিত্তি হবে সুদৃঢ়, উন্মোচিত হবে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত।     

দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ়করণ এবং বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেড অংগীকারাবদ্ধ। সফল আমরা হবোই, ইনশাআল্লাহ্।

এই ওয়েব পোর্টালটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা এবং কর্মপরিধি সম্পর্কে জনগণকে অবিহিত করার লক্ষে তৈরি করা হয়েছে। কারিগরি জটিলতা পরিহার করে একে একটি সহজবোধ্য তথ্যভান্ডার হিসেবে তৈরি করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। 

ওয়েব পোর্টালটি তৈরি এবং কার্যকর করার কাজে নিয়োজিত সকলের অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করছি।